What is Harmone? হরমোনের কাজ, হরমোন প্রকারভেদ ও উপকারিতা?
আমাদের শরীরে প্রতিদিন নানা রকমের শরীরবৃত্তীয় কাজ হয়ে থাকে। Glucose এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে সেটস নিয়ন্ত্রণ, ঘুম আনানো থেকে শুরু করে হাড়ের গঠণ েএমনকি প্রজনন কিংভা নানা রকমের অঙ্গ পরিচালনায় নানা রকমের হরমোন কাজ করে থাকে। এই হরমোন এতই গুরুত্বপূর্ণ যে আমাদের এটির সম্পর্কে সঠিক ধারণা থাকা খুবই জরুরী।
হরমোন কী?
হরমোন হলো আমাদের শরীরে অবস্থি এক ধরণের বার্তা সরবরাহকারী রাসায়নিক পদার্থ যা সাধারণত নালিবিহীন গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়ে সরাসরি রক্তের সাথে মিশে যায়। এর পরে রক্তের মাধ্যমে এটি সারা দেহে ছড়িয়ে দেয় এবং প্রয়োজনীয় শরীরবৃত্তীয় কাজ সম্পাদন করে।
হরমোন এর অপর নাম হলো প্রাণরস।
একটি নিদির্ষ্ট হরমোন সাধাণত আমাদের শরীরে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করে থাকে। একটির কাজ আরেকটি থেকে আলাদা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই এরা কাজ শেষে ধ্বংসি বা নিঃশেষ হয়ে যায়।
উৎপত্তিস্থল
শুরুতেই বলা হয়েছে নানা রকমের নালিকাবিহীন অন্তক্ষরা গ্রন্থি হরমোন তৈরী করে থাকে। নিচে সাতটি গ্রন্থির নাম এবং তা থেকে উৎপন্ন হরমোনের নাম দেওয়া হলো”-
- পিটুইটারি গ্লান্ড (Pituitary Gland): গ্রোথ হরমোন (GH), থাইরয়েড স্টিমুলেটিং হরমোন (TSH), ফলিকল-স্টিমুলেটিং হরমোন (FSH), অক্সিটোসিন (Oxytocin)
- থাইরয়েড গ্লান্ড (Thyroid Gland): থাইরক্সি (T4) এবং ট্রাইয়োডোথাইরোনিন (T3)
- প্যারাথাইরয়েড গ্লান্ড (Parathyroid Gland): প্যারাথাইরয়েড (Parathyroid)
- এড্রেনাল গ্লান্ড (Adrenal Gland): কর্টিসল (Cortisol), অ্যালডোস্টেরণ (Aldosterone), অ্যাড্রেনালিন (Adrenaline) এবং নরড্রেনালিন (Nor Adrenaline)
- অগ্ল্যাশয় (Pancreas): ইস্ট্রোজেন (Insulin) এবং গ্লকাগন (Glucagon)
- ডিম্ব্যাশয় (Ovary): ইস্ট্রোজেন (Estrogen) এবং প্রাজেস্টেরন (Progesterone)
- টেস্টিস (Testes): টেস্টোস্টেরন (Testosterone)
এছাড়াও আরো নানা ধরনের গ্রন্থি থেকে বিভিন্ন রকমের হরমোন নিঃসরণ করে থাকে।
হরমোন কীভাবে কাজ করে?
হরমোন এর নির্দিষ্ট টার্গেট সেল রয়েছে। এই সকল কোষের বাইরে রিসেপ্টর থাকে। এই সকল রিসেপ্টরের সাথে সংযুক্ত হয়ে নানা রকমের বিক্রিয়া শুরু করে। একটি হরমোন একটি কোষের কাজ চালু করতে কিংবা বন্ধ করতে দুইভাবেই অবদান রাখতে পারে।
হরমোনের প্রকারভেদ?
হরমোন কে তার গঠন অনুসারে মূলত- তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। নিচে প্রকারভেদগুলো দেওয়া হলো-
- পেপটাইড হরমোন (Peptide Hormone)
- স্টেরোয়েড-জাত হরমোন (Steroid Derived Hormone)
- এমাইনো এসিড জাত হরমোন (Animo Acid Derived Hormone)
পেপাটাইড হরমোন-
এই ধরনের হরমোনের নাম থেকে বুঝা যায় েএরা পেপাটাইড কিংবা প্রোটিন দিয়ে গঠিত। এই ধরণের হরমোনে আলাদা আলাদা রকমোর এমাইনো এসিড দেখতে পাওয়া যায়- ইনসুলিন, গ্লকাগন, অক্সিটোসিন, গ্রোথ-হরমোন এই ধরণের হরমোন।
স্টেরোয়েড-জাত হরমোন
এই ধরনের প্রাণরস কোলেস্টেরোল থেকে তৈরী হয়। যেমন: টেস্টোস্টেরণ, কাটিসল, ইস্ট্রোজেন।
এমাইনো এসিড জাত হরমোন
এই ধরণের প্রাণরস ট্রিপটোফেন এবং টাইরোসিন নামক এমাইনো এসিড থেকে তৈরী হয়ে। যেমন: এপিনেফ্রিন, নরএপিনেফ্রিন।
এছাড়াও ফ্যাটি এসিড ডিরাইভড হরমোন (Fatty Acid derived Hormone), Ecosanoids, Neurohormone, Growth Factor সহ বিভিন্ন ভাগ উপভাগে হরমোনকে বিভক্ত করা সম্ভব।
হরমোনের কাজ ও উপকারিতা
হরমোন আমাদের শরীরে নানা রকমের কাজ করে থাকে। যার উপকারিতা আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে উপভোগ করি। নিচে এটির দশটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ দেওয়া হলো-
- মেটাবোলিজমে: হরমোন আমাদের শরীরের নানা রকমের মেটাবোলিক এক্টিভিটি নিয়ন্থ্র করে থাকে। যেমন- এনসুলিন, glucagon আমাদের শরীরে শর্করা, আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্যের পরিপাক ও সমন্বয়ে কাজ করে থাকে।
- বৃদ্ধি ও শরীর গঠনে: গ্রোথ-হরমোন, সেক্স-হরমোন, থাইরয়েড- হরমোন আমাদের শরীরে বৃদ্ধি, গঠন ও পরিবর্তনে সাহায্য করে থাকে।
- প্রজনন: টেস্টোস্টেরন, এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টেরন ইত্যাদি হরমোন আমাদের প্রজনন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে। এদের ছাড়া বংশবৃদ্ধি সম্ভব হতো না।
- মন-মানসিকতা এবং আচার-আচরন: নানা রকমের প্রাণরস আমাদরে আচার আচরন, ব্যবহার, মানসিকতা ইত্যাদিকে প্রভাবিত করে। যেমন- সেরোটোনিন, ডোপমিন।
- হাড়ের সুস্থতায়: টেস্টোস্টেরন এবং এস্ট্রোজেন আমাদের হাড়ের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে এবং অস্টেওপরোসিসকে বিলম্বিত করে।
- রক্ত সঞ্চালনে: এল্ডোস্টেরন আমাদের শরীরে ক্ত সঞ্চালন এবং ইলেকট্রোলাইটিক ব্যালেন্স ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- ইমিউন সিস্টেমের সহযোগীতায়: কর্টিসল এবং এড্রেনালিন আমাদের শরীরে চাপ সামলে নিতে সাহায্য করে এবং একই সাথে এরা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে সতর্ক রাখে।
- ঘুম: মেলাটোনিন আমাদের ঘুম আনতে এবং সারকেডিয়ান সাইকেল ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- রুচি ধরে রাখতে: অনেক সময় আমাদের খাবারের রুটি কমে বা বেড়ে যায়। এটিও হরমোন এর কারণেই হয়ে থাকে। যেকন- লেপটিন।
- ত্বকের সুরক্ষায় এস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরণ আমাদের ত্বকে সতেজ রাখতে এবং বয়স ধরে রাখতে সাহায্য করে।
অভাব জনিত সমস্যা
হরমোন স্বল্পমাত্রায় তৈরী হলে নানা রকমের সমস্যা হতে পারে। এমন হতে পারে যে একটি কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণে প্রাণরস তৈরী হয়নি। যার ফলে হয়ত কাজটিই অপূর্ণ থেকে যায়।
নিচে আমরা হরমোন অভাব জনিত কিছু সমস্যার কথা আলোচনা করছি।
- হাইপোথাইরয়েডিসম: হাইপো শব্দের অর্থ হলো কম। হাইপোথাইরয়েডিসম হয় যখন পর্যপ্ত পরিমাণে থাইরোয়েড হরমোন নিঃসৃত হয় না। এই ধরনের সমস্যা হলে আক্রান্ত ব্যক্তির মাঝে স্থুলতা, দুর্বলতা, কোষ্ঠকাটিন্য, ঠান্ড সহ্য না হওয়া, হতাশার মতো সমস্যা দেকা দিতে পারে।
- এড্রেনাল ইনসাফিসিয়েন্সি: এই ক্ষেত্রে এড্রেনালিন ও কার্টিসল তৈরী কমে যায়। িএর ফলে আমাদের চাপ নেওয়ার ক্ষমতাও হ্রাস পায়। একই সাথে দেখা দেয় বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, ইলেক্ট্রলাইটিক ইম্বেলেন্স, তলপেটে ব্যথা, নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি।
- গ্রোথ-হরমোনের অভাব: এই প্রাণরস এর অভাবে আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ব্যাঘাত ঘটে। িএকই সাথে হাড়ের গঠণে সমস্যা দেখা দেয়।
- ডায়াবেটিস: ইনসুলিনের অভাবে ডায়াবেটিস দেখা দিতে পারে।
- প্রজননে ব্যাঘাত: টেস্টস্টেরন, প্রোজেস্টেরন, এস্ট্রোজেন ইত্যাদি হরমোন এর অভাবে প্রজননে সমস্যা হয়। বন্ধ্যাত্ব, পুষত্বহীনতা, ইরেক্টাইল ডিসফাংশন, মহিলাদের ঋতুচক্রে সমস্যা ইত্যাদি দেকা দিতে পারে।
- ঘমে ব্যাঘাত: মেলাটোনিনের অভাবে ইনসোমনিয়া বা নিদ্রাহীনতা দেখা যায়।
- বাই পোলার ডিসঅর্ডার: এটি একটি মানসিক ব্যাধি। মস্তিস্কে হরমোন এর অসংলগ্রতার জন্য এই ধরনের ব্যাধি দেখা দিতে পারে। যেহেতু নানা রকমের হরমোন নানা রকমের কাজ করে থাকে সেহেতু একেকটির অভাজনিত সমস্যাও ভিন্ন ভিন্ন। এখানে অল।প কিছু সমস্যা উল্লেখ করা হয়েছে।
আধিক্যজনিত সমস্যা
হরমোন যেহেতু আমাদের কোষের ক্রিয়ার উপরে সরাসরি প্রভাব বিস্তার লাভ করতে পারে, সেহেতু এটি অতিরিক্ত পরিমানে তৈরী হলেও নানা রকমের সমস্যা জন্ম হতে পারে। নিচে কিছু সমস্যার কথা দেওয়া হলো-
- Cushing's syndrome: এই রোগের কারণ হলো অতিরিক্ত কর্টিসল হরমোন তৈরী। এর ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হঠাৎ মেজাজ-মর্জি পরিবর্তন হয়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, মাংসপেশীতে দূর্বলতা ইত্যাদি দেখা দেয়।
- জায়ান্টিজম: গ্রোথ হরমোনের অতিরিক্ত নিঃস্বরণের ফলে মানুষ বিশালাকার ধারণ করে। শিশু কিংবা কিশোরদের দৈহিক বৃদ্ধির সময় অতিরিক্ত প্রাণরস ক্ষরণের ফলে এই সমস্যা দেখা দেয়।
- হাইপারইনসুলিনজম: মাত্রাতিরিক্ত ইনসুলিন তৈরী হওয়ার কারণে ব্লাড সুগার সব সময় আশঙ্খাজনক হারে কম থাকে। এর ফলে তীব্র ঘাম হওয়া, দুর্বলতা এবং হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে।
- হইপার-প্যারাথাইরোয়েডিজম: এই সমস্যায় প্যারাথাইরোয়েড হরমোন তৈরী বেড়ে যায় ফলে শরীরে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও বেড়ে যায়। এই সমস্যা কিডনিতে পাথর, কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার দিকেও ধাবিত হতে পারে।
এছাড়াও নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে হাইপার-থাইরয়েডিজম, এক্রোমেগালি, হাইপার গোনাডিজম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য হরমোন এর মাত্রা ঠিক রাখতে যা খাওয়া উচিত।
নানা রকমের খাবার রয়েছে যা আমাদের শরীরে প্রাণরসের অনুপাত ঠিক রাখতে সাহায্য করতে পারে। নিচের এমন কিছু খাবারের কথা বলা হলো-
- সুবজ শাক - পালং শাক, পুই শাক, কলিম শাক, লাই শাক ইত্যাদি।
- ক্রুসিফেরাস সবজি- ব্রকলি, ফুলকপি, বাধাকপি।
- স্বাস্থ্যকর স্নেহ জাতীয় খাদ্য- অলিভ ওয়েল, এভোকাডো, বাদাম।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার- ডাল, শিমের বিচি, মটরশুটি।
- প্রো-বায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার- দই, কিফার।
- জিংক সমৃদ্ধ খাবার- ঝিনুক, গরুর মাংস (পরিমিত পরিমাণে), কুজড়োর বিচি
- ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার- সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসম।
আমাদের এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাকে হরমোন বিষয়ে ধারণা দেওয়া চেষ্ঠা করেছি।
এছাড়াও হরমোন নিয়ে আমাদের কিছু কমন প্রশ্ন ও উত্তর দেওয়া হলোঃ-
আপডেট হচ্ছে-
0 Comments