আলসার মানে ঘা বা ক্ষতি। েএটি পাকস্থলীতে হলে তাকে বলে হয় গ্যাস্ট্রিক আলসার। আর ক্ষুদ্রান্ত্রের উপরিভাগে হলে ডিওডেনাল আলসার। গলনালির নিচের প্রান্ত বা ছোট অন্ত্রের জেজুনামেও আলসার হতে পারে। একত্রে এসব আলসারকে পেপটিক আলসার বলা হয়।
আলসার কেন হয়?
- গ্যাস্ট্রিক আলসারের প্রধান কারণ- হেলিকোব্যাক্টার পাইলোরি নামের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। এটি দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। পাকস্থলীতে প্রবেশ করে এ ব্যাকটেরিয়া মউকাস মেমব্রেনকে ক্ষতিগ্রস্থ করে।
- ব্যথানাশক ওষুদের ঘন ঘন ব্যবহার, যেমন আইবুপ্রোফেন, ন্যাপ্রক্সেন, এসিক্লোফেনাক, ক্লোফেনাক বা অ্যাসপিরিনের মতো ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে বা উচ্চ মাত্রায সেবন করলে আলসার হতে পারে।
- নিদ্রাহীনতা, ধূমপান ও মদ্যপান, জন্মগতভাবে পরিপাকতন্ত্রের গঠনগত কাঠামো দূর্বল হওয়া, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ আলসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িতে তুলতে পারে। অতিরিক্ত মসলা ও তেল-চর্বিযুক্ত খাবার বেশি খেলেও ঝুঁকি বাড়ে।
কীভাবে বুঝবেন আলসার হয়েছে?
- পেটে জ্বালাপোড়া, অসহনীয় ব্যথা ও পেট ফুলে থাকা।
- বুকে ব্যথা ও জ্বালা করা।
- বমি ভাব বা বমি। কখনো সঙ্গে রক্ত আসতে পারে।
- মলের সঙ্গে রক্তপাত ও মলের রং খয়েরি বা কালো হওয়া।
আলসার শনাক্ত করার উপায়?
আলসার নির্ণয়ে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি েএন্ডোস্কোপি পরীক্ষা। এছাড়া ইউরিয়া শ্বাস পরীক্ষা, রক্তের অ্যান্টিবড়ি পরিক্ষা (অ্যান্টি-এইচ পাইলোরি আইজি), স্টুল অ্যান্টিজেন, সিএলও ইত্যাদি পরীক্ষা করা।
আলসারের লক্ষণ?
খাদ্য অন্ত্রে রক্তক্ষরণ, রক্তশূন্যনা, খাদ্যনালিতে ছিদ্র ও পেরিটোনাইটিস (পেটে সংক্রমন), পাকস্থলী বা ক্ষুদ্রান্ত্র চিকন হয়ে যাওয়া, কিছু গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে ক্যানসারও হতে পারে।
কিভাবে আলসারের চিকিৎসা করা হয়?
- প্রথমে রোগের কারণ জানা জরুরী। যদি ব্যথানাশক ওষুধের কারণে আলসার হয়, তবে অবশ্যই ওষুধটি বন্ধ করতে হবে।
- যদি পাকস্থলীতে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ থাকে, তবে এইচ পাইরোরি নাশক অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খেতে হবে। যদি এইচ পাইলোরির সংক্রমণ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের অ্যাসিড নিঃসরণ রোধকারী ওষুধ সেবন করা যেতে পারে। জটিলতা হলে কিছু ক্ষেত্রে সার্জারিও লাগতে পারে।
ডাক্তার বিমল চন্দ্র শীল, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ল্যাবএইড স্পেশালাইজড হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা।
0 Comments